১. শির নেহারি আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির’ – ব্যাখ্যা করুন।
‘শির নেহারি আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির’ কথাটির মধ্য দিয়ে আত্মজাগরণে উন্মুখ কবির সদম্ভ আত্মপ্রকাশ ঘোষিত হয়েছে। আলোচ্য কবিতার কবি বীর ধর্মের অনুসারী। আত্মপ্রত্যয়ী বীরের চিত্ত সর্বদাই সমুন্নত। সংগত কারণেই কবির এই বীর সত্তআ কোনোকিছুকে পরোয়া করে না; ধ্বংসের দামামা বাজিয়ে এগিয়ে যায় নতুন সৃষ্টির লক্ষ্যে ।কিবি মনে করেন, আত্মগৌরবে বলীয়ান তাঁর সেই সদম্ভ বিরোচিত রূপ অবলোকন করে হিমাদ্রি তথা হিমালয়ও যেন মাথা নত করে। প্রশ্নোক্ত চরণটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
২.‘আমি চারদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস’ – পঙ্ক্তিটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করুন।
অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে নিজের বিধ্বংসী রূপটিকে তুলে ধরতেই কবি প্রশ্নোক্ত চরণটির অবতারণা করেছেন। কবি পরাধীন ভারতভর্ষের শৃঙ্খলিত জীবনব্যবস্থা এবং বৈষম্য-নিপীড়নের বিরুদ্ধে দ্রোহ করেছেন। আর তা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন অপশক্তির বিনাশ ব্যতীত সমাজের কাঙ্ক্ষিত বিনির্মাণ সম্ভব নয়। তাই তিনি নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অশুভকে নাশ করতে প্রয়োজনে দুর্দম, দর্বিনীত; এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নৃশংস হতেও রাজি। প্রশ্নোকত্ চরণটিতে কবির এই ধ্বংসকামী রূপটিই প্রতিভাত হয়।
৩. কবি নিজেকে ‘মহাপ্রলয়ের নটরাজ’ বলেছেন কেন? – সংক্ষেপে লিখুন।
নটরাজ শিবের মতো ধ্বংসলীলা চালিয়ে অপশক্তিত নাশ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কবি নিজেকে ‘মহা-প্রলয়ের নটরাজ’ বলেছেন। ভারতীয় পুরাণ মতে, নৃত্যকলার ‘উদ্ভাবক হিসেবে মহাদেব শিবের আর এক নাম নটরাজ। তাঁর ধ্বংসের সময়কার নৃত্যকে তাণ্ডব নৃত্য’ বলা হয়। গজাসুর ও কালাসুরকে নিধন করে তিনি তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন। কবিও পুরণের সে ঐতিহ্য স্মরণ করে সমকালীন প্রেক্ষাপটে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীসহ সকল প্রকার অপশক্তিকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিজেকে তিতিন মহা-প্রলয়ের নটরাজ বলে অভিহিত করেছেন।ৎ
৪. ‘আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস’ – কবি এ কথা বলেছেণ কেন? – সংক্ষেপে লিখুন।
কবি ঔপনিবেশিক ভারতবর্সে ব্রিটিশ রাজশক্তির অপশাসনসহ সকল অপশক্তির ধ্বংস কামনা করে নিজেই বিধ্বংসী রূপে হাজির হয়েছেন। কবি জন্মেছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে এদেশের মানুষ তখন হাঁপিয়ে উঠেছে। প্রথম মহাযুদ্ধের প্রভাবে এ সমস্যা আরু প্রকট হয়ে ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশি বেনিয়াদের সাথে দেশীয় অপশক্তির যুগপৎ অত্যাচার- নির্যাতনে ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে মানবতা। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে সকল অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে দ্রোহ ঘোষণা করেন কবি। এরই অংশ হিসেবে আলোচ্য কবিতার প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করে তিনি সকল অপশক্তির ধ্বংস কামনা করেছেন।
৫. কবি নিজেকে মহাভয় বলে অভিহিত করেছেন কেন? – সংক্ষেপে লিখুন।
অন্যায়- অবিচার নিয়ে অপশক্তির মনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যেই কবি নিজেকে ‘মহাভয়’ বলে অভিহিত করেছেন। পরাধীন ভারতবর্ষ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত শোষিত, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত হতে দেখেছেন কবি। এভাবে মানুষকে নিপীড়িত হতে দেখে সংক্ষু্ব্ধ হয়ে কিব বিদ্রোহের পথ বেছে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যায় ও অসাম্য ঘোচাতে অত্যাচারীরর মনে তিনি বীতি সঞ্চার করতে চান। এ লক্ষ্যে সকল অপশক্তির মনে ভয় হিসেবে আবির্ভূত হতে চান তিনি। এ জন্যই কবিব নিজেকে ‘মহাভয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
৬. কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন কেন? – সংক্ষেপে লিখুন।
সমাজে বিরাজমান অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর বিধ্বংসী রূপ বোঝাতেই কবি নিজেকে প্রথিবীর অভিশাপ বলে উল্লেখ করেছেন। পরাধীন ভারতবর্ষের ব্রিটিশ রাজশক্তি তখন জগদ্দল পাথরের মতো এদেশবাসীর ওপর চেপে বসেছে। অত্যাচারী এই মাসকগোষ্ঠীর অপশাসনে সমগ্র দেশই যেন নরকে রুপান্তরিত হয়েছে। এদের ধ্বংস করতে হলে এক ভয়ানক রুদ্রের প্রয়োজন, যে এদের সাজানো বাগানকে তছনছ করে দিতে পারে। কবি নিজেই সেই রুদ্ররূপ ধাণ করে অত্যাচারীর জন্য মহাপ্রলয় আনতে চেয়েছেন। তিনি যেন সাক্ষাৎ অভিশাপ, যিনি অত্যাচারী ও শোষকেরর সাম্রাজ্যকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবেন। েএমন েোভাব থেকেই নিজেকে তিনি পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন।
৭. ‘আমি দুর্বার/আমি ভেঙে করি সব চুরমার’ – সংক্ষেপে লিখুন।
আলোচ্য উক্তিতে কবির বিধ্বংসী রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি শোষণ-বঞ্চনা ও অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে উ্চ্চকণ্ঠ। পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বেনিয়া শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের অপশাসন ও ভেদ-বৈষম্যের কাঁতাকলে পিষ্ট দেশবাসীকে তিনি মুক্ত করতে চা। এ লক্ষ্যেই দুর্বার গতিতে তিনি শোষক ও অত্যাচারীর সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে চান। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে বিদ্রোহী কবিসত্তার এমন বিধ্বংসী রূপই প্রতিফলিত হয়েছে।
৮. নিয়ম-শৃঙ্খলার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয় বরে কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ অভিহিত করে শৃঙ্খল ভাঙার বার্তা দিয়েছেন। পরাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন- শোষণের জাঁতাকলে মাসুষকে নিষ্পেষিত হতে দেকে কবির হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি দেখেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আইন ও বাধ্যবাধকতার বেড়াজালে মাসুষকে নাকাল হতে হয়। সংগত কারণেই তিনি আিইনের এই বেড়াজাল ভেঙে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ লক্ষ্য সামনে রেখেই তিনি অনিয়ম দিয়ে প্রচলিত নিয়মকে এববং উচ্ছৃঙ্খলতা দিয়ে শৃঙ্খলিত ও প্রথাবদ্ধ জীবনব্যবস্থাকে বাঙতে চেয়েছেন।এজন্যই কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ বলে অভিহিত করেছেন।
৯. ‘আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল’- কবি এ কথা বলেছেন কেন? –অতি সংক্ষেপে লিখুন।
নিয়মের বেড়াজাল দিয়ে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার নিয়ম ভঙ্গ কেরে সে অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে চেয়েছেন। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে জন্মগ্রহন করে কবি ব্রিটিশ বেনিয় মাসকগোষ্ঠীর অন্যায়, অত্রাচার ও অবিচারকে প্রত্যক্ষ করেছেন কাছ থেকে। এ সকর অন্যায়ের বিবরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে চাইলেই এদেশবাসীর ওপর নেমে এসেছে নিয়মকানুনেরর বেড়াজাল । কবি তাই সব ধরণের বন্ধন ছিন্ন করে, আইনের বেড়াজার কেটে বেড়িয়ে আসার মাঝেই মুক্তি খুঁজেছেন। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে কবির সে মনোভাবই ব্যক্ত হয়েছে।
১০. কবি কোনো আইন মানন না কেন? অতি সংক্ষেপে লিখুন।
পরাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীরর প্রণীত আইন দেশের মানুষকে শৃঙ্খলিত ক রেখেছিল বলেই কবি এই নিপীড়নমূলক আইন মানতে চাননি। সুশৃঙ্খল ও শার্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যই আইন প্রণয়ন করা হয় । তা সত্ত্বেও যুগে যুওগ আইনের দোহাই দিয়ে অপশক্তির প্রতিভূরা সমাজে অন্যায়-অত্যাচারের স্টিমরোলার চালায়। অত্যাচারিত ও নিপীড়িত মানুষ এর প্রতিকার চাইলেই আইনের দোহাই দিয়ে তাদের শৃঙ্খলিত করা হয় । এসব দেখেই কবি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তথাকথিত ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর স্বীয়স্বার্থে তৈরি আইন ভঙ্গ করবেন । আর তাই কবি বলেছেন যে, তিনি কোনো আইন মানেন না।
আরো পড়ুন – ভালো শ্রোতা হওয়ার কৌশল
১১.‘ আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভামান মাইন’ – সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
প্রশ্নোক্ত চরণটির মধ্যদিয়ে কবিবর ধ্বংসকামী মানসিকতার ভয়বহ রূপটি ফুটে উঠেছে। অন্যায় ও’ অসাম্যকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কবি অপশক্তিকে ধ্বংস করতে চান। এ লক্ষ্যে নিজেকে তিনি নানা বিধ্বংসী রূপে কল্পনা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি অত্যাচারীর ভর-তরী তথা সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দেবেন এবং টর্টেডো ও মাইনের মতো বিধ্বংসী অস্ত্ররূপে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন, তা্ বোঝাতেই কবি বলেছেন, ‘আমি ভরা-তরী করি ভার-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন।
১২. কবি নিজেকে ধূর্জটি বলেছেন কেন? – স্ংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
কবি অপশক্তির বিরুদ্ধে বিবদ্রোহ ঘোষণা করতে গিয়ে ধ্বংসের দেবতা শিবের ধূর্জটি রূপে নিজেকে কল্পনা করেছেন। পরাধীন ভারতবর্ষে বিরাজমান অন্যায় ও অসাম্য প্রত্যক্ষ করে ব্যথি কবি এর বিরুদ্ধে দ্রোহ ঘোষণা করেন। অপশকি্তর ধ্বংস করতে গিয়ে নিজেকে তিনি নানা পৌরাণিক ধ্বংসকারী চরিত্রে কল্পনা করেছেন। ধূম্ররূপী জটাধারী শিব বা মহাদেববকে ধূর্জটি বলা হয়। শিবের এই সংহারক রূপটিকে অবলম্বন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে নেমে আসতে চান। এজন্যই কবি নিজেকে ধূর্জটি বলে অভিহিত করেছেন।
১৩. ‘আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর’ – সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেতনার ধারক হিসেব্ েকবি নিজেকে বিশ্ববিধাতার বিদ্রোহী পুত্র বা সুত বলে অভিহিত করেছে। পরাধীন ভারতবর্ষে তখন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সমাজে শক্ত আসন গেড়ছে অন্যায়-অত্যাচার ও বৈষম্য। সংগত কারণেই সমাজে জেঁকে বসা এই বৈষম্য ও অচলায়তনকে ভাঙতে ছেয়েছিলেন কবি। এ লক্ষ্যেই তিনি উচ্চারণ করেন দ্রোহের পঙ্তিমালা। তাঁর এই দ্রোহ কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। অত্রাচারীর বিরুদ্ধে তিনি বিধ্বংসী রূপ নিয়ৈ আবির্ভূত হন। বিদ্রোহী চেতনার ধারক হিসেবে অন্যায় ও অসাম্যোর বিরুদ্ধে তাঁর এই নিরন্তর দ্রোহের বিষয়টি বোঝাতেই কবি নিজেকে বিশ্ব-বিধাতার-সুত বা বীর পুত্র বলে অভিহিত করেছেন।